অন্যান্য

Pahela Baisakh: পহেলা বৈশাখের ইতিহাস কি? কেন পালন করা হয় পহেলা বৈশাখ? জানুন

বাঙ্গালীদের জীবনে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হল পহেলা বৈশাখ (Pahela Baisakh)। এই দিনটিতে নতুন বছর শুরু হওয়ার পাশাপাশি মানুষের মন ও নতুনভাবে রিফ্রেশ হয় বলা চলে। নতুন করে ঘর সাজানো থেকে শুরু করে নতুন নতুন রান্না, বাংলার নতুন ক্যালেন্ডার , নতুন হালখাতা সব মিলিয়ে দিনটিকে উৎসবমুখর করে তোলে।

শৈশবে এই দিনটি আমাদের জীবনকে বেশ আনন্দমুখর করে তুলতো। তবে শুধুমাত্র ছোটরা নয়, বড়রাও এই দিনটির খুশির আমেজে মেতে থাকতেন। বাঙালির অন্যতম বড় উৎসব গুলির মধ্যে অন্যতম একটি বড় উৎসব এই পহেলা বৈশাখ। কেন পালন করা হয় পহেলা বৈশাখ? (Why is Pahela Baisakh celebrated?) জেনে নিন বিস্তারিত।

পহেলা বৈশাখের ইতিহাস: (History of Pahela Baisakh)

কবে থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হচ্ছে, তাই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ রয়েছে।

ছোটবেলায় আমরা অনেকেই একটা গান বা কবিতা শুনেছি, “খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছে ‘খাজনা’ দেবো কিসে ?”

মনে করা হয় এই খাজনা কথাটা থেকেই বাংলার প্রথম সাল গণনা শুরু হয়। অনেক আগেকার দিনে খাজনা আদায় বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখা হতো। রাজা এবং জমিদাররা প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন। খাজনা আদায়ের হিসাব রাখা সংক্রান্ত বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল সেই সময়। সে সময় চৈত্র মাসের শেষ দিন খাজনা আদায় করার দিন বলে মনে করা হতো। আর বছরের প্রথম দিন নতুন হালখাতা নিয়ে নতুন ভাবে খাজনা আদায় করার হিসাব লিপিবদ্ধ করা হতো।

মনে করা হয় বাংলা ক্যালেন্ডার চালু করেছিলেন সপ্তম শতাব্দীর রাজা শশাঙ্ক। পরবর্তীকালে মুঘল সম্রাট আকবর এই ক্যালেন্ডার সংশোধন করেছিলেন কর আদায় সংক্রান্ত কারণে। তখন থেকেই হয়তো পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়ে চলেছে।

অনেক ঐতিহাসিকরা মনে করেন পহেলা বৈশাখ উৎসবটি হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সাথে সম্পর্কিত। এইজন্য এই দিনটি বৈশাখী নামে পরিচিত বাঙ্গালীদের কাছে। তবে শুধুমাত্র বাংলাতেই নয় দেশের অন্যান্য রাজ্য এই দিনটি পালিত হয় এবং বিভিন্ন নামে পালিত হয়।।

পহেলা বৈশাখ পালিত হয় মূলত পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে। এই দুই জায়গার বাঙালিরা পহেলা বৈশাখ উৎসবটি পালন করেন। তবে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ নয়, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে বিভিন্ন রকম উৎসব পালিত হয় এবং বিদেশে বসবাসকারী বাঙালীরাও দিনটি পালন করে থাকেন।

পহেলা বৈশাখ দিনটিকে বাংলার উৎসব সৌর বছরের প্রথম দিন হিসেবে ধরা হয়। আসাম , মনিপুর ,কেরল ,উড়িষ্যা ,নেপাল ,পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ,ত্রিপুরা এই সমস্ত জায়গায় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পহেলা বৈশাখ দিনটি পালন করা হয় বিভিন্ন নামে।

এর আগে পহেলা বৈশাখ একটি ঋতুধর্মী উৎসব ছিল। তখনকার দিন কৃষকদের ঋতুর ওপরেই নির্ভর করতে হতো। এখন প্রতিবছর ১৫ ই এপ্রিল তারিখটিতে বাংলা নববর্ষ শুরু হয় এবং এই দিনটিকে পহেলা বৈশাখ হিসেবে পালন করা হয়।

আধুনিক নববর্ষ উদ্‌যাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও এমন ঘটনার উল্লেখ পাওযা যায়।

নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য চৈত্র মাস থেকে শুরু হয় উৎসবের পরিবেশ। দুই বাংলার মানুষেরা এই উৎসবে মেতে উঠেন। ধনী-গরীব সকলে মিলে এই দিনটি পালন করেন। সকালে উঠে হলুদ মাখা, স্নান করা, পশু পাখিদের স্নান করানো, নতুন জামা কাপড় পরা, বিভিন্ন রকম সুস্বাদু পদের রান্না ,চারিদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ, তার সাথে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো..” সবমিলিয়ে প্রকৃতিকে অন্যতম একটি রূপে সাজিয়ে তোলে।

স্নান করে বড়দের প্রণাম করা হয় এইদিনে। ব্যবসায়ীরা নতুন হালখাতা করেন। বিভিন্ন জায়গায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়। ছোট ছোট বাচ্চারা থেকে বড়রা নতুন জামা কাপড় পরে ঘুরতে বেরোয়। এই দিন দুই বাংলাতেই সরকারিভাবে ছুটি দেওয়া হয়। ছোট থেকে শুরু করে বড়রা, সবাই আনন্দে মেতে ওঠে পহেলা বৈশাখ দিনটিতে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker