মোটা অঙ্কের মাইনে ছেড়ে ব্রহ্মচারী হন ২৯ বছর বয়সে! বিতর্কের শিরোনামে থাকা এই অমোঘ লীলা দাস আসলে কে? জানুন
আধ্যাত্মিকতা বা ধার্মিকতার জগতে(In the world of spirituality or piety) অনেকেই পরিচিতি পান তাঁদের নম্রতা, ভদ্রতা ও মিষ্টভাষী (Humility, gentleness and soft-spokenness) হবার কারণে।এভাবেই অনেক গুরু ভালোবাসা পেয়ে আসছেন সাধারণ মানুষের। এরকমই এক ধর্মীয় গুরু হলেন অমোঘ লীলা দাস(Amogh Leela Das)। তবে তাঁর পরিচিতি বর্তমানে অন্য। বিতর্কের শিরোনামে জ্বলজ্বল করছে তাঁর নাম তাঁরই কৃতকার্যের ফলে। ঠিক কী করেছেন তিনি? কী তাঁর প্রকৃত পরিচয়? সবটাই জানবো আজ এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ(Shri Ramkrishna and Vivekananda), বাঙালির হৃদয়ে যাঁরা জন্ম জন্মান্তর ধরে বসবাস করছেন; আর শুধু বাঙালি কেনো বলছি? সমগ্র মানবজাতি এই দুই মহান আত্মার কাছে সারাজীবন ঋণী থাকে। সেই দুই মহান ব্যক্তির কিছু বিশেষ বাণীর ‘অপব্যাখ্যা’ (Misinterpretation) করায় নির্বাসিত হলেন অমোঘ লীলা দাস। শাস্তিস্বরূপ ইসকনের তরফে এক মাস নির্বাসনে (In Exile) পাঠানো হল তাঁকে।
বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমে বক্তা হিসেবে সুপরিচিত এই অমোঘ লীলা দাস (Amogh Leela Das) সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের বিভিন্ন বাণীর অপব্যাখ্যা করেন(Misinterprets Various Sayings of Sri Ramakrishna and Vivekananda)। শুধু বাণী নয়, একই সঙ্গে এই দুই যুগপুরুষের খাদ্যাভ্যাস (Food Habits) নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পরেন সকলে। অবিলম্বে নির্বাসিত করা হয় তাঁকে। ইসকনের তরফে এই শাস্তির খবর জানান ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস(Vice President Radharaman Das)।
কে এই অমোঘ লীলা দাস? আসুন তাঁর প্রকৃত পরিচয় জেনে নেওয়া যাক।
এই ধার্মিক গুরুর পূর্ব পরিচয় সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তার বিবরণ নিম্নরূপ:
অমোঘ লীলা দাস (Amogh Leela Das) লখনউয়ের একটি ধর্মীয় পরিবারে (Religious Family) জন্ম নেন। অল্প বয়স থেকেই তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিক টান (Spiritual Attraction) আসে একথা তিনি নিজেই অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। তবে তাঁর প্রকৃত নাম কিন্তু অমোঘ লীলা দাস নয়।
জানা গেছে যে তাঁর পূর্ব এবং প্রকৃত নাম ছিল আশীষ অরোরা(Asish Arora)। তাঁকে নিয়ে মা বাবার তিনটি সন্তান। আরো দুই বোন আছে তাঁর। তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর পদস্থ অফিসার(An Officer of the Indian Spy Agency ‘R’)। লখনউয়ে জন্ম হলেও বাবার বদলির চাকরির সুবাদে মিজোরাম, গ্যাংটক, দার্জিলিং ও আইজলের মতো জায়গায় কেটেছে স্কুলজীবন ও ছেলেবেলা।
এরপর ২০০০ সালে যখন তিনি দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়েন, তখন ঈশ্বরের সন্ধানে বাড়ি ছেড়েছিলেন। তবে পরে সিদ্ধান্ত নেন আবার সংসার জীবনে ফিরে আসার। দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করার পর সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (Software Engineering) নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ২০০৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। তারপরে আশিষ আমেরিকার একটি বহুজাতিক সংস্থায় (In an American Multinational Company) কাজ শুরু করেন।
এবার মনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য যে কীভাবে আশিষ অরোরা হলেন আজকের অমোঘ লীলা দাস। আসুন জেনে নেওয়া যাক।
আশিষ অরোরা (Asish Arora) ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা কর্পোরেট দুনিয়াতেই (Corporate World) কাজ করেছেন। প্রোজেক্ট ম্যানেজারের (Project Manager) পদে কাজ করতে করতেই সিদ্ধান্ত নেন কাজ ছাড়ার। এর মধ্যেই তাঁর দুই বোনের বিয়ে হয়।
এরপর হঠাৎ করেই, মাত্র ২৯ বছর বয়সে ব্রহ্মচারী (Celibate) হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আশিষ। চাকরি ছেড়ে যোগ দেন ইসকনে এবং লীন হন কৃষ্ণভক্তিতে। সিদ্ধান্ত নেন ব্রহ্মচারী হবার। নিজের যোগ্যতায় ও সুবক্তা হবার সুবাদে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন ইসকনের নিউ দিল্লির দ্বারকা শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট(Vice President of Iskon in the Part of Dwarka in New Delhi)।
ধীরে ধীরে মানুষের ভালোবাসা পেয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে উঠেছিলেন। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে (Social Media) বিভিন্ন মোটিভেশনাল ভিডিওতে (Motivational Video) ট্রেন্ডিং (Trending) এ থাকতো তাঁর বক্তৃতার ভিডিও। এত জনপ্রিয়তা, এত ভালোবাসা সবকিছু এক ধাক্কায় হারিয়ে ফেললেন নিজের একটি ভুল পদক্ষেপে(Wrong Step)।এই জন্যই একটি কথা বহুল প্রচলিত আছে:
“ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না!”
-Written by Riya Ghosh