Table of Contents
হরপ্পা/সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণ কী ছিল ?
ভূমিকাঃ
সিন্ধু সভ্যতার অবলুপ্তির কারণ হিসাবে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। যেহেতু প্রায় ২৭০ ধরনের হরফ বা অক্ষর দিয়ে লেখা হরপ্পা সভ্যতার লিপির পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি তাই এই সভ্যতার পতনের কারণ হিসাবে কোনো একটি কারণ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। ঐতিহাসিকদের দেওয়া বিভিন্ন মতামতের উপর ভিত্তি করে সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো।
(ক) অদক্ষ শাসকঃ
সমাজে ঐক্যের অভাব,অসংগঠিত পৌর প্রশাসন ব্যবস্থা,প্রজাদের প্রতি শাসকের আনুগত্যের অভাব এবং সর্বোপরি শাসকশ্রেনির অদক্ষ পরিচালনা হরপ্পা সভ্যতার পতনকে নিশ্চিত করে দিয়েছিল।
(খ) একগুঁয়েমি সমাজঃ
হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা তথা রক্ষনশীল সমাজের মানুষেরা অন্যান্য সভ্যতাগুলির আধুনিকতাকে গ্রহণ করেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ব্যাবিলনের উন্নত এবং আধুনিক মানের সেচপদ্ধতি সিন্ধুরা গ্রহণ করেনি। যারফলে এই সভ্যতা সময়ের সঙ্গে নিজেকে যুগোপযোগী করে তুলতে পারেনি এবং কালের নিয়মে ধীরে ধীরে অবলুপ্তির দিকে এগোতে থাকে।
(গ) প্রাকৃতিক কারনঃ
অধিকাংশ ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক দুর্যোগকেই সিন্ধু সভ্যতার পতনের জন্য দায়ী করেছেন। ঐতিহাসিক রাইকস এবং ডেলস ক্রমাগত বন্যা ও বারংবার ভূমিকম্প, ভৎসা সিন্ধু নদীর গতিপথ পরিবর্তন, স্টেইন অনাবৃষ্টি এবং সুদ ঘাগর নদীর শুকিয়ে যাওয়াকে এই সভ্যতার পতনের মূল কারণ মনে করেন। এছাড়া জমিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি, রাজপুতানার মরুভূমির সম্প্রসারণ ইত্যাদি হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়।
(ঘ) বৈদেশিক আক্রমণঃ
ঐতিহাসিক মার্টিমান হুইলার এবং গর্ডন চাইল্ড-এর মতে উত্তর-পশ্চিম ইরান থেকে আগত আর্যদের আক্রমণের ফলেই সিন্ধু সভ্যতার পতন হয়েছিল। এছাড়া ঋগবেদেও হরপ্পার অধিবাসীদের সঙ্গে আর্যদের ‘হারিয়ুপিয়া’-এর যুদ্ধের উল্লেখ পাওয়া যায়।
উপসংহারঃ
পরিশেষে একথা বলা যায় যে, হরপ্পা সভ্যতার অবলুপ্তির কারণ হিসাবে ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন মতামতের কোনোটিই যেমন সম্পূর্ন ভুল নয় তেমনই কোনোটিই সম্পূর্ন সঠিক নয়। তাই কোনো একটি কারণকে অধিক গুরুত্ব না দিয়ে একথা বলাই যায় যে, কালের নিয়মে যেমন সিন্ধু সভ্যতার উত্থান হয়েছিল ঠিক তেমনই কালের নিয়মেই তার পতন হয়েছিল।