Business Idea: গ্রামের বেকার ছেলেদের জন্য সেরা ৩টি ব্যবসার আইডিয়া, পরিশ্রম করতে পারলে লাখপতি।
অনেকের মনেই ধারণা আছে যে, ব্যবসা করতে গেলে ব্যবসার উপযোগী অনুকূল পরিবেশ একমাত্র শহরেই আছে, তবে আপনাদের ধারণা ঠিক নয়। কারণ গ্রামে থেকেও অনেক ব্যবসা (Business Idea) করা যায় এবং প্রত্যেক মাসে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত করা যায় কিছু ব্যবসায়।
বর্তমানে গ্রাম শহরের বহু বেকার যুবক-যুবতীরা সরকারি এবং বেসরকারি চাকরি (Private Job) না পেয়ে ব্যবসার উদ্যোগ নিচ্ছেন নিজেদের স্বল্প পুঁজিকে কাজে লাগিয়ে বা সরকার থেকে লোন নিয়ে তারা বিভিন্ন রকম ব্যবসা শুরু করছেন এবং অনেকের সফল হচ্ছেন।
যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে গেলে আপনাদেরকে সেই ব্যবসাটির সম্পর্কে খুঁটিনাটি সমগ্র তথ্য জানতে হবে এবং অবশ্যই ধৈর্য ধরে, নিষ্ঠা সহকারে কাজ করতে হবে। একটু দেরিতে হলেও, আপনাদের জীবনের সাফল্য আসবেই এবং প্রত্যেকেই স্বাবলম্বী হবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন রকম ব্যবসার আইডিয়া(Business Idea) সম্পর্কে আপনাদের জানানো হয়। বহু মানুষ এই আইডিয়াগুলি কাজে লাগিয়েছেন নিজেদের জীবনে এবং তাদের ব্যবসা শুরু করেছেন। অনেকে ইতিমধ্যে প্রত্যেক মাসে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন এবং অনেকেই ধৈর্য ধরে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদেরকে জানানো হবে গ্রামের করার মতো বেশ কয়েকটি বিজনেস আইডিয়া সম্পর্কে। খুব অল্প পুঁজি দিয়ে আপনারা এই ব্যবসা গুলি শুরু করতে পারবেন , এবং প্রত্যেক মাসে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন। তাছাড়া সম্ভাবনা রয়েছে লাখপতি হবারও।
Table of Contents
১) নার্সারির ব্যবসা:
গ্রামের দিকে করার মতো অন্যতম একটি ব্যবসা হলো নার্সারির ব্যবসা(Nursery Business)। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাড়ি ঘরে অনেক শৌখিন গাছপালা রাখেন। তাছাড়া ফুল, ফল এবং সবজি চাষের উদ্দেশ্যেও অনেকে গাছপালা কিনে থাকেন। গ্রাম হোক বা শহর, নার্সারীর ব্যবসা দুই জায়গাতেই খুবই সম্ভাবনাময় একটি ব্যবসা।
যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে গেলেই তার বেসিক জিনিসগুলো এবং মার্কেট সম্পর্কে জেনে রাখতে হয়। নার্সারির ব্যবসা শুরু করতে গেলেও আপনাদের বেশ কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে।
নার্সারি কি?
(What is Nursery?)
নার্সারি হলো এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন রকম গাছ এর চারা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে রাখা থাকে। এই গাছের চারা হতে পারে কোন ফুলের চারা ফলের ছাড়া বা বিভিন্ন রকম সবজির চারা। এখানে বিভিন্ন গাছের চারা এবং শাকসবজি চারা প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রস্তুত করে রেখে দেওয়া হয় বিক্রি করার আগে পর্যন্ত। তবে বর্তমানে বিভিন্ন নার্সারিতে শুধুমাত্র চারা গাছ নয়, বরঞ্চ গাছের সমগ্র প্রয়োজনীয় উপাদান এবং সৌন্দর্যের সমস্ত জিনিসপত্র বিক্রি হয়।
নার্সারির ব্যবসায় কি কি উপকরণ প্রয়োজন?
নার্সারীর ব্যবসা করতে গেলে আপনার অবশ্যই অনেক টব, সারযুক্ত মাটি, জৈব সার, ফুল ও ফলের চারা দরকার। এছাড়া মাটির যত্ন করার জন্য ছুরি, নিড়ানি, আগাছানাশক ইত্যাদি দরকার। গাছ ছাটাই করার জন্য প্রুনার এবং জলের একটা বড় উৎস দরকার।
কেন আপনার নার্সারি ব্যাবসায় আসা উচিৎ?
(Why you should start Nursery Business? )
নার্সারি ব্যবসা একটি বেশ সম্ভাবনাময় ব্যবসার আইডিয়া। এই ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সাধারণত কম থাকে। আপনি আপনার বাড়ির উঠানকে কাজে লাগিয়েও এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন বা আশেপাশে পড়ে থাকা জমিকে ব্যবহার করেও এই ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন। এটি একটি পরিবেশবান্ধব ব্যবসা এবং নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমে পরিবেশকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলা যায়। এই ব্যবসার স্বাধীনভাবে শুরু করা যায়, বেশি ইনভেস্টমেন্ট(Investment) এর প্রয়োজন হয় না।
নার্সারির ব্যবসা করতে গেলে কতটা জায়গা লাগে?
নার্সারির ব্যবসা করতে খুব বেশি একটা জায়গার প্রয়োজন হয় না। তবে আপনার যদি বড় জায়গা থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি নার্সারির ব্যবসাটি বড় করে করতে পারবেন। বাড়ির উঠানেও আপনারা এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন এছাড়া বাড়ির ছাদ, প্রতিবেশীর বাড়ির উঠান,অব্যবহৃত , পড়ে থাকা জমি ইত্যাদি বহু জায়গায় আপনারা এই ব্যবসা শুরু করে দিতে পারবেন। তবে ফুল চুরি বা গাছ চুরির থেকে বাঁচতে অবশ্যই আপনার নার্সারির চারিদিকে বেড়া দিতে হবে।
নার্সারি কেমন ভাবে সাজানো উচিত ?
যেকোনো নার্সারীর প্রধান অস্ত্র হলো তার কালেকশন। আপনার কাছে যদি বিভিন্ন রকম চারা গাছ থাকে, তাহলে সেগুলিকে যতটা সম্ভব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হবে। কম দামি গাছ থেকে বেশি দামি গাছ পরপর সাজিয়ে রাখলে আরো ভালো হবে। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে গ্রাহক যখন অন্য কোন গাছ কিনতে নার্সারিতে আসবেন, তখন যেন তিনি আরও একটি গাছ কিনে নিয়ে যেতে পারেন তার সাশ্রয় মূল্যের মধ্যে হওয়ার কারণে। যে গাছগুলি সাধারণত রেয়ার প্লান্ট(Rare Plant) হিসেবে পরিচিত সেই গাছগুলিও সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে পারেন, যাতে সহজেই মানুষের চোখে পড়ে।
নার্সারি ব্যবসায় গাছ ছাড়া আর কোন কোন জিনিস রাখলে ব্যবসা বাড়বে?
নার্সারীর ব্যবসা বলতে মূলত গাছপালার ব্যবসাকেই বোঝানো হয়। তবে বর্তমানে বিভিন্ন নার্সারিতে গাছপালার পাশাপাশি কম দাম থেকে শুরু করে বেশি দামের টব সাজিয়ে রাখা হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্লাস্টিকের পাত্র, বিভিন্ন রকম গাছের বীজ, ভালো সার, ভালো মাটি ইত্যাদি জিনিস নার্সারিতে বিক্রি করলে ব্যবসায় আরো টাকা আসবে।
নার্সারির ব্যবসাতে কি লাইসেন্সের প্রয়োজন?
যে কোন ব্যবসা করতে গেলেই লাইসেন্স(Business Lisense) করে নিলে ভালো হয়। পরবর্তীকালে যে কোন রকম আইনি ঝামেলার থেকে আপনারা সহজেই বাঁচতে পারবেন। আপনার নার্সারীর একটি সুন্দর নাম দিয়ে সেই নামের একটি লাইসেন্স করে নেবেন এলাকার পঞ্চায়েত অফিস থেকে।
নার্সারির ব্যবসার প্রমোশন করবেন কিভাবে?
নার্সারীর ব্যবসা শুরু করলে আপনারা প্রথম দিকে হয়তো কাস্টমার পাবেন খুব কম। তবে যত বেশি মানুষ আপনার নার্সারি সম্পর্কে জানতে পারবে ততই আপনার গ্রাহক সংখ্যা(Customer) বাড়বে দিনে দিনে। নার্সারীর গাছ গুলির দাম যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করবেন যাতে করে আপনারা মোটামুটি লাভ করতে পারেন। গাছপালার দাম বেশি হলে অনেক গ্রাহকই আপনার নার্সারী মুখো হবে না। এছাড়া আপনার নার্সারিতে বিক্রি করা গাছপালাগুলি যদি এমন একটি প্যাকেটে করে বিক্রি করতে পারেন, যেখানে আপনার নার্সারির নাম এবং লোকেশন সম্পর্কে দেওয়া থাকে, তাহলে সেই প্যাকেটের মাধ্যমেও বহু মানুষ আপনার নার্সারির লোকেশন সম্পর্কে জানতে পারবে।
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে (Social media Platform) আপনার নার্সারীর প্রোমোশনাল ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করলে সেগুলির মাধ্যমে বহুমানুষ আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারবে।
বড় বড় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলির সাথে কথা বলে রাখলে সেখান থেকেও আপনারা প্রমোশন পেতে পারেন। এখন বহু বিয়ে বাড়িতে, অন্নপ্রাশন বাড়িতে বা অন্যান্য অনুষ্ঠান বাড়িতে আসা অতিথিদের গাছ উপহার দেওয়া হয়। আপনারা যদি আপনাদের নার্সারি থেকে এই গাছপালা সরবরাহ করতে পারেন, সেখান থেকেও বেশ মোটা অংকের ইনকাম আপনারা করতে পারবেন।
২) রান্নার ইউটিউব চ্যানেল:
বর্তমানে ইউটিউবের(YouTube) মাধ্যমে অনেক টাকা উপার্জন করছেন বহু ছেলেমেয়েরা। ইউটিউবে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ ভিডিও বানান। তবে অন্যতম একটি বিষয় যেটি বর্তমানে খুব পপুলার, সেটি হলো রান্নার ইউটিউব চ্যানেল(Cooking YouTube Channel)।
বাড়িতে রান্না করার সময় সেই ভিডিওটি তৈরি করে, এডিট করে সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করে অনেকেই ইউটিউবে আপলোড করেন। সেখান থেকে প্রচুর মানুষ ভিডিও দেখেন ,সাবস্ক্রাইব করেন চ্যানেল এবং ফলস্বরূপ ইউটিউব থেকে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন অনেকে।
Villfood, Popi’s Kitchen ইত্যাদি বহু রান্নার Youtube চ্যানেল বর্তমানে বেশ বিখ্যাত। এখানে পোস্ট হওয়া এক একটি ভিডিও কয়েক লক্ষ মানুষ দেখেন। ইনকাম(Income) করেন লাখ লাখ টাকা।
ইউটিউবে রান্নার ভিডিও আপলোড করতে গেলে আপনাদেরকে যতটা সম্ভব সহজ, সুন্দরভাবে বলে রান্না করতে হবে। এমন কোন উপকরণ রান্নাতে দেবেন না , যেগুলি সাধারণ মানুষের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমাদের হাতের কাছে থাকা জিনিসপত্র দিয়ে অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। আপনারা সেই রকম জিনিসপত্র দিয়ে রান্না করার ভিডিও দিয়েই ইউটিউব চ্যানেল(YouTube Channel) শুরু করতে পারেন।
আপনার ভিডিওগুলি যদি ভালো হয়, তাহলে খুব শীঘ্রই আপনারা প্রচুর ভিউয়ার পেয়ে যাবেন, যারা নিয়মিত আপনার ভিডিও দেখবে। একবার আপনার চ্যানেল মনিটাইজ হয়ে গেলে প্রত্যেক মাসে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন আপনারা youtube এর মাধ্যমেই।
৩) মাছ চাষ:
গ্রামের দিকে ব্যবসা করার মতো অন্যতম একটি ব্যবসা হল মাছ চাষের ব্যবসা(Fishery Farming Business)। বর্তমানে গ্রামের বহু বেকার যুবকেরা মাছ চাষ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন। মাছ চাষ করতে গেলেও আপনাদেরকে বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
মাছ চাষের জায়গা:
মাছ চাষের জন্য যতটা সম্ভব খোলামেলা পরিবেশে থাকা একটি পুকুর নির্বাচন করতে হবে।। মোটামুটি অল্প গভীর জল হলে ভালো হয়। আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি কোন পুকুর থাকে তাহলে সেটি আপনার পক্ষে ভালো হবে।
পুকুরের মাটি কেমন সেটি পরীক্ষা করে নিতে হবে প্রথমে। পুকুরের মাটি এবং জল যদি আম্লিক হয় তাহলে চুন দিয়ে সেটিকে প্রশম করতে হবে।
মাছের পোনা নির্বাচন:
এমন ধরনের মাছের পোনা নির্বাচন করুন যেগুলি সাধারণত সহজে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে না। পুকুরে যাতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। না হলে সেগুলি মাছের জীবনের উপর প্রভাব ফেলবে।
কোন কোন মাছ পুকুরে চাষ করার পক্ষে ভালো?
পুকুরে চাষ করার পক্ষে সেরা কয়েকটি মাছ হলো গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, বাটা ইত্যাদি। আপনারা এগুলি এলাকার কোন বড় ফিস মার্কেটে গিয়ে সেখান থেকে জোগাড় করে নিতে পারবেন।
মাছের খাবার হিসেবে কি কি দেওয়া হতে পারে?
মাছের খাবার হিসেবে আপনারা অবশ্যই জৈব খাবার ব্যবহার করবেন। কারণ রাসায়নিক খাবার ব্যবহার করে অনেক সময় মাছের মৃত্যু হয়। হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা থেকে তৈরি সার আপনারা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া এলাকার পশুখাদ্যের দোকান থেকেও মাছের খাবার কিনতে পারবেন আপনারা।
মাছ চাষের ক্ষেত্রে পরিচর্যা:
মাছ চাষ করতে গেলে অবশ্যই মাছ এবং পুকুর, উভয়ের পরিচর্যা করতে হবে আপনাকে। যদি কোন মাছ মারা যায় তাহলে সেটি কেন মারা গেল বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট করতে হবে। মাছের রোগ হলে উপযুক্ত ওষুধ জলে মেশাতে হবে। এছাড়া পুকুরে যাতে শ্যাওলা এবং কচুরিপানা না জন্মায়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।। পুকুরে যাতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
মাছ চাষের পর আপনারা সেগুলি জাল দিয়ে তুলে বিভিন্ন রকম মাছের সাইজ অনুযায়ী সাজিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারেন। বা বড় কোন হোলসেল মার্কেটে গিয়েও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারেন।