ব্যবসা-বাণিজ্য

Business Idea: বিবাহিত মহিলাদের জন্য ৪টি সেরা ব্যবসার আইডিয়া, সংসার করতে করতে করুন মোটা উপার্জন।

সমাজে এখন মেয়েরা কোন অংশেই পুরুষদের থেকে পিছিয়ে নেই, বরঞ্চ অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে অনেক এগিয়ে গিয়েছেন তারা। তবে অধিকাংশ রক্ষণশীল পরিবারে এখনো মহিলাদের বাইরে বেরিয়ে কাজ করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও অনেক মহিলারাই চান পরিবারের পাশে দাঁড়াতে, খারাপ সময়ের সংসারের হাল ধরতে, নিজের খরচের জন্য কিছু টাকা উপার্জন করতে।

তবে চাইলেই হয়তো সবসময়ই মনবাঞ্ছা পূরণ হয় না। অনেকের কাছে কোন ব্যবসা করার মতো পুঁজি থাকে না , আবার অনেকের কাছে পুঁজি থাকলেও ব্যবসা করার মতো আইডিয়া(Business Idea) থাকে না। তাদের কাছে স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে যায়।

আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদেরকে জানানো হবে বিবাহিত মহিলাদের জন্য ব্যবসা করার চারটি আইডিয়া (Business Ideas for Married Women), যেগুলি আপনারা বাড়িতে বসেই করতে পারবেন এবং প্রত্যেক মাসের শেষে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে ফেলতে পারবেন।

১) বিউটি পার্লার:

বাড়িতে বসে বা বাড়ির আশেপাশের মধ্যে করার মতো বিজনেস গুলির মধ্যে অন্যতম একটি বিজনেস হলে বিউটি পার্লারের বিজনেস(Beauty Parlour Business)। খুব অল্প জায়গাতেই আপনারা বিউটি পার্লার খুলতে পারবেন। বাড়িতে জায়গা না থাকলেও সরাসরি ক্লায়েন্টার বাড়িতে গিয়েও আপনারা সাজিয়ে উপার্জন করতে পারবেন।

কি কাজ করতে হয়?

বর্তমানে মেয়েরা প্রত্যেকেই সাজতে পছন্দ করেন। এছাড়া কোনো বিবাহ বা আনন্দ অনুষ্ঠানে সবাই চান মেকআপ করে অনুষ্ঠানে যেতে। বিউটি পার্লার খুললে আপনাকে গ্রাহকদের সাজিয়ে উপার্জন করতে হবে।

বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুযায়ী সাজের ধরন বিভিন্ন রকম হয়। এছাড়া একাধিক জনের সাজের মধ্যে থাকে বিভিন্নতা। তাছাড়া মেহেন্দি পরানো, ত্বক, চুলের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি কাজগুলিও বিউটি পার্লারের কাজের মধ্যে পড়ে।

আপনারা চাইলে বাড়িতে বা বাড়ির আশেপাশে কোন জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়ে বিউটি পার্লার খুলতে পারেন এবং সেখানে গ্রাহকদের সরাসরি সার্ভিস দিতে পারেন। এছাড়া গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে বা কোন উৎসব অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়ে সেখানকার মেয়েদের সাজিয়েও আপনারা অনেক টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন প্রত্যেক মাসে।

কিভাবে শুরু করবো?

বিউটি পার্লার খুলতে গেলে প্রথমে আপনাকে বিউটিশিয়ান কোর্স(Beautician Course) করতে হবে। অনেক মেকআপ আর্টিস্ট আছেন, যারা বিউটিশিয়ান কোর্স করান। সেখান থেকে বিউটিশিয়ান কোর্স করে নিতে পারলেই আপনার সার্টিফিকেট পাবেন এবং তারপরে আপনারা বিউটি পার্লারের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। বিউটি পার্লারের ব্যবসার পাশাপাশি আপনারা যদি মেকআপ প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারেন তাহলে অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে আপনাদের। এছাড়া আপনারাও পরবর্তীকালে বিউটিশিয়ান কোর্স করাতে পারবেন এবং অনেক ছাত্রছাত্রীদের বিউটি পার্লার এর কাজ শিখিয়ে উপার্জন করতে পারবেন।

কিরকম ইনকাম সম্ভব?

প্রত্যেকটি কাজ কিছু আপনারা 500 টাকা থেকে হাজার টাকা বা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন। বিবাহের মরসুমে আপনারা প্রত্যেক মাসে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন। এছাড়া প্রায় সারা বছরই গ্রাহকদের যাওয়া আসা লেগেই থাকবে। এই ব্যবসাতে লোকসান বলতে কিছুই নেই, আপনারা প্রত্যেক মাসে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

২) কন্টেন্ট রাইটিং:

বাড়িতে বসে করার মত অন্যতম একটি বিজনেস আইডিয়া হল কনটেন্ট রাইটিং(Content Writing Busines) আপনারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লিখে বা কোন ব্লগে লিখে উপার্জন করতে পারবেন। দিনের অল্প সময় ব্যয় করেই আপনারা এই কাজটি করতে পারবেন এবং মন মত স্যালারি পেয়ে গেলে নিজের পছন্দমত জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।

কি কাজ করতে হয়?

কন্টেন রাইটিং এ আপনাকে মূলত লেখার কাজ করতে হবে। এখানে আপনারা ইউনিক কনটেন্ট রাইটিং বা কপি রাইটিং এর কাজ করতে পারবেন। ইউনিক কনটেন্ট রাইটিং এ আপনাকে নিজে থেকেই কোন লেখা লিখতে হবে। কপির রাইটিং এ আপনারা কোন একটি লেখার বেশ কিছু অংশ পরিবর্তন করে সেটিকে নতুন ভাবে প্রেজেন্ট করতে পারেন।

কিভাবে শুরু করবো?

আপনারা ব্লগ লেখার মাধ্যমে কনটেন্ট রাইটিং এর কাজ শুরু করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট রাইটারদের প্রয়োজন পড়ে, আপনারা বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইটে কন্টাক্ট করে সেখানে কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ শুরু করতে পারেন। এছাড়া ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনারা কনটেন্ট রাইটিং এর কাজ পার্টটাইম বা ফুলটাইম হিসেবে করতে পারবেন।

কিরকম ইনকাম সম্ভব?

বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনারা প্রত্যেকটি লেখা কিছু ভারতীয় মুদ্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য আরো কনটেন্ট রাইটিং সাইট আছে, যেখানে লিখে আপনারা বেশ মোটা অংকের টাকা পেতে পারেন। পুরো দামে কাজ করলে আপনারা প্রত্যেক মাসে কুড়ি হাজার টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন।

৩) বুটিক বিসনেজ:

বর্তমানে অনেক মহিলারাই উপার্জনের রাস্তা হিসেবে বুটিক বিজনেস বেছে নিয়েছেন। বুটিকে থাকে নতুন ডিজাইন, কালার এর বাহারি রঙের পোশাক এবং অন্যান্য অলংকার। ফ্যাশন সচেতন ক্রেতারা বর্তমানে বুটিক থেকেই নিজেদের পোশাক কেনা পছন্দ করেন।

কি কাজ করতে হয়?

বুটিকের ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে পোশাক ডিজাইন এর জ্ঞান থাকতে হবে, কাপড় এবং অন্যান্য অলংকার, উপকরণের দোকান থাকতে হবে এবং বিক্রি করার জন্য একটি প্রচার মাধ্যমের দরকার পড়বে। দোকানের পরিবর্তে আপনারা বাড়িতে থেকেও ওই ব্যবসাটি করতে পারবেন।

এমব্রয়ডারি, বাটিক, বাধেনি, কাঁথা স্টিচ, জারি, ফ্যাব্রিক এবং কাচ-এর কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে পোশাকের ডিজাইন আরো আধুনিক এবং নতুনত্ব করে তুলতে হবে। আপনার এই প্রোডাক্ট গুলি বিক্রি করার মাধ্যমে উপার্জন করতে পারবেন বেশ মোটা অংকের টাকা।

কিভাবে শুরু করবো?

প্রাইকারি মার্কেট থেকে আপনারা পোষাক-আশাক কিনে সেটির উপর বিভিন্ন রকম নকশা করতে পারেন। হোলসেলার মার্কেট থেকে বিভিন্ন অলংকার কিনে এনে সেগুলি সুন্দর পদ্ধতিতে সাজিয়ে, আরো নতুনত্ব ডিজাইন হিসেবে প্রেজেন্ট করে আপনার গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। পাশাপাশি আপনার পণ্যের প্রচার করার মাধ্যম হিসেবে কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মকে ব্যবহার করতে পারেন বা প্রচার মাধ্যমে হিসেবে লিফলেট এর ব্যবস্থা করতে পারেন।

কিরকম ইনকাম সম্ভব?

আপনার গ্রাহক সংখ্যা যত বেশি হবে আপনার ইনকামের পরিমাণও তত বেশি হবে। প্রত্যেকটি প্রোডাক্টে আপনারা ন্যূনতম দেড়শ টাকা থেকে ২০০ টাকা বা তারও বেশি টাকা লাভ করতে পারবেন। সে হিসেবে আপনারা যদি মাসে ১০০ টি জিনিস বিক্রি করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আপনারা সর্বোচ্চ কুড়ি হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন।

৪) কুকিং ইউটিউব চ্যানেল:

বাড়িতে যেভাবে রান্না করেন, তার পুরো প্রসেসটা যদি ভিডিওর মাধ্যমে ইউটিউবে আপলোড করা যায়, সেখান থেকে অনেক টাকা উপার্জনের সুযোগ রয়েছে। এর জন্য আপনাদের দরকার হবে একটি Cooking YouTube channel।

কি কাজ করতে হয়?

আপনারা বাড়িতে যেভাবে রান্না করেন তার পুরো প্রসেসটার ভিডিও করে সেটির প্রেসেন্টেশন, সহজ-সরল ভাষা, রান্নার প্রসেস ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদে বলে যদি ভিডিও তৈরি করতে পারেন, তাহলে সেই ভিডিওটি ইউটিউবে পোস্ট করলে অনেক মানুষেরা সেই ভিডিওটি দেখবে এবং ইউটিউব পলিসি অনুযায়ী আপনারা ইউটিউব থেকে টাকা পাবেন।

ভিডিওগ্রাফি, এডিটিং, ভয়েস ওভার, ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি বিষয়গুলি যদি ভাল থাকে তাহলে দর্শকদের কাছে বিষয়টি আরো বেশি চিত্তাকর্ষক হবে। খুব সহজেই আপনারা অনেক সাবস্ক্রাইবার অর্জন করে ফেলতে পারবেন।

কিভাবে শুরু করবো?

আপনার একটি ভালো ক্যামেরা বা মোবাইল থাকতে হবে এবং তার সাথে থাকতে হবে ভালো ইন্টারনেট। কিভাবে রান্না করছেন, তাতে কোন কোন মসলা দিচ্ছেন, কিভাবে রান্না করলে ভালো হবে ইত্যাদি বিষয়গুলি আপনারা যদি খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে রান্নার ভিডিও করতে পারেন, তাহলে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যার দিকে আর তাকানো লাগবে না। বাড়ির রান্নাঘরে ছোটখাটো একটি ভিডিও সেটাপ রেডি করলেই আপনারা এই কাজটি খুব সহজেই শুরু করে দিতে পারবেন।

কিরকম ইনকাম সম্ভব?

বর্তমানে বিভিন্ন রান্নার চ্যানেলগুলি প্রত্যেক মাসে 1 লক্ষ টাকা থেকে 15 লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছে। যেমন পপিস কিচেন, Tradiswad, Villfood ইত্যাদি। আপনাদের ভিডিওতেও যদি ভালো ভিউজ আসে এবং সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বেশি হয় , তাহলে ইউটিউব থেকে প্রচুর টাকা উপার্জন করতে পারবেন আপনারা।

Written By: তন্ময় দেবনাথ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker